সুপ্রিয় পাঠক, আজ আমরা আলোচনা করব দেশের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয় ও লাভজনক একটি খাত নিয়ে – হাঁসের মাংস ও এর অর্থনীতি। এক সময় যা শুধুমাত্র গ্রামাঞ্চলের সীমিত আড্ডার খাবার ছিল, আজ তা জায়গা করে নিয়েছে রাজধানীর ফাইভ স্টার হোটেল থেকে শুরু করে শহুরে দাম্পত্য রান্নাঘর পর্যন্ত।
হাঁসের মাংসের জনপ্রিয়তা: শীত ছাড়িয়ে সারাবছর
এক সময় শীতকাল এলেই হাঁসের মাংসের চাহিদা বেড়ে যেত। পিঠা-পুলির আড্ডা, বাড়ির মেহমানদারি কিংবা হোটেল-রেস্তোরাঁর মেনুতে হাঁসের পদ থাকত অপরিহার্য। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন আর হাঁসের আবেদন কোনো নির্দিষ্ট ঋতুতে আটকে নেই। বর্ষা, গ্রীষ্ম, শীত – সারাবছরই এখন হাঁসের মাংস সমান জনপ্রিয়। ঢাকার নীলা মার্কেটের মত স্থানীয় বাজার থেকে শুরু করে ওয়েস্টিনের মত বিলাসবহুল হোটেল, সর্বত্রই হাঁস এখন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মেনু আইটেম।
হাঁস পালন শিল্প: একটি বিশাল অর্থনৈতিক খাত
হাঁসের এই বাড়তি চাহিদা দেশে গড়ে তুলেছে একটি বিশাল ও প্রাণবন্ত অর্থনৈতিক খাত। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী:
-
২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে হাঁসের সংখ্যা ছিল মোট ৪ কোটি ৮৯ লাখ।
-
২০২২-২৩ অর্থবছরে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৬০ লাখে।
-
অর্থাৎ, গত ১০ বছরে দেশে হাঁসের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ।
দেশের হাওর অঞ্চলগুলোতে সবচেয়ে বেশি হাঁস পালন করা হয়। এছাড়াও, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের উত্তরাঞ্চলেও দ্রুত বাড়ছে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হাঁসের খামার।
হাঁসের বাজার: হাজার কোটি টাকার শিল্প
হাঁসের মাংসের বাজার এখন একটি হাজার কোটি টাকার শিল্পে পরিণত হয়েছে।
-
সরকারি হিসাব মতে, হাঁসের বার্ষিক বাজারমূল্য সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা।
-
তবে, এই খাতের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের মতে, প্রকৃত বাজার এর চেয়েও অনেক বড়।
-
দেশে এখন ছোট-বড় মিলিয়ে ১০ হাজারেরও বেশি বাণিজ্যিক হাঁসের খামার রয়েছে।
-
শীতকালে হাঁসের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। শুধুমাত্র রাজধানীর পাইকারি বাজারগুলোতেই প্রতিদিন বিক্রি হয় ২০ হাজারেরও বেশি হাঁস।
হাঁসের মাংসের দাম
বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী:
-
একটি জীবন্ত পাতিহাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়।
-
রাজহাঁস ও চিনাহাঁসের দাম কেজিপ্রতি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা।
-
শহরের সুপারশপগুলোতে ড্রেসিং করা বা প্রক্রিয়াজাত হাঁসের মাংস পাওয়া যাচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়।
রপ্তানির বিশাল সম্ভাবনা
দেশের ভেতরে হাঁসের বাজার দ্রুতগতিতে বড় হলেও, আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি এখনো খুবই সীমিত। এই খাতের বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সরকার ও উদ্যোক্তাদের সমন্বিত ও পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে হাঁসের মাংস রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও বিশাল সুযোগ তৈরি হতে পারে।
উপসংহার
গ্রামের মাঠ থেকে শহরের রেস্তোরাঁ, হাওরের খামার থেকে ফাইভ স্টার হোটেলের রান্নাঘর – হাঁস এখন শুধু একটি সুস্বাদু খাবারই নয়, এটি দেশের কৃষি অর্থনীতির একটি সম্ভাবনাময় এবং ডায়নামিক খাত। এই দ্রুত বর্ধনশীল শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে এবং এর পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে রপ্তানির দিকেও এখনই গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
ট্যাগস (Tags):
হাঁসের মাংস, হাঁস পালন, হাঁসের দাম, বাংলাদেশে হাঁসের বাজার, হাঁসের খামার, হাওরাঞ্চলে হাঁস পালন, হাঁস মাংসের জনপ্রিয়তা, হাঁস রপ্তানি, কৃষি অর্থনীতি, প্রাণিসম্পদ, ঢাকার হোটেলে হাঁসের মাংস, পাতিহাঁস, রাজহাঁস, চিনাহাঁস, শীতের খাবার, বাংলা খাবার